যে কৌশলে সহজে পড়া মনে রাখতে পারবেন

মেমোরি হ্যাকস – পড়া এমনভাবে মনে রাখুন, যেন মাথায় আলাদা হার্ডডিস্ক বসানো আছে

রাত ৩টা বাজে।
আপনি বইয়ের ওপর হেলে ঘুমাচ্ছেন, পাশে নোট খোলা।
হঠাৎ ঘুম ভেঙে মনে হলো – “আমি কি কিছুই মনে রাখতে পারি না?”

মন খারাপ করবেন না।
আপনার মাথা ঠিকই আছে।
শুধু তাকে চালাতে হবে সঠিক কৌশলে।
এই লেখায় আমি আপনাকে বলব এমন কিছু মেমোরি হ্যাকস, যেগুলো শুনলে মনে হবে, “আরে! এতদিন এগুলা জানতাম না কেন?”

১. Active Recall – প্রশ্ন করুন, উত্তর মাথা নিজেই দেবে

এই কৌশলটা একটু রহস্যময় শোনায়।
কিন্তু সোজা কথায়, আপনি যখন নিজের পড়া নিজেকে প্রশ্ন করে বলেন, তখন মস্তিষ্ক ভাবে –
"ওহ! এটা তো দরকারি, মনে রাখতে হবে।"

যেমন ধরুন, আপনি ইতিহাস পড়ছেন।
পড়ার শেষে চোখ বন্ধ করে নিজেকে প্রশ্ন করুন –
"পলাশীর যুদ্ধ কেন হয়েছিল?"
"কে হেরে গিয়েছিল?"

প্রথমবার উত্তর মনে না আসলেও, বারবার করলে মাথার ভেতরে এক ধরনের চোরাগলি তৈরি হয়।
সেই গলি দিয়েই তথ্য হেঁটে হেঁটে একসময় স্থায়ী হয়ে যায়।

২. Spaced Repetition – মনে রাখার জন্য ভুলতে দিন

একবার পড়ে ভুলে যান।
তারপর আবার মনে করান।
এই ভুলে যাওয়ার এবং মনে করানোর মধ্যেই লুকিয়ে আছে দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতি।

Day 1 – নতুন টপিক পড়লেন
Day 3 – আবার পড়লেন
Day 6 – আবার একটু দেখে নিলেন
Day 10 – শুধু প্রশ্ন করে উত্তর মিলিয়ে নিলেন

এইটুকু করলেই তথ্য মনে থাকবে... ঠিক যেন পাসওয়ার্ড মনে রাখার মতো।

৩. Visual Hooks – ছবি আঁকুন, মনে গেঁথে যাবে

মাথা ছবি অনেক বেশি মনে রাখে।
তাই আপনার পড়ার বিষয়টা যদি আপনি চিত্রে ভাবেন, তাহলে সেটা ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনা একেবারে কমে যায়।

যেমন:
DNA পড়ছেন?
তাহলে সেটা চিন্তা করুন মুচমুচে টুইস্ট করা সিঁড়ি হিসেবে।

অথবা Newton’s Laws?
একটা ধাক্কা দেওয়া বল কল্পনা করুন, সঙ্গে একজন খুব রাগী শিক্ষক যিনি বলছেন –
“একশন = রিঅ্যাকশন!”

একবার কল্পনা করলে, আবার দেখতে হবেনা। মাথায় ফ্রেম হয়ে থাকবে।

৪. গল্পে জুড়ে দিন – boring facts → interesting tales

একেকটা তথ্যকে আপনি যদি গল্পে ফেলতে পারেন, তাহলে সেটা নিজের মতো হাঁটতে শেখে।

ধরেন, আপনি পঠিত হচ্ছেন Periodic Table
– নামগুলো মনে রাখতে কষ্ট?

তাহলে বানিয়ে ফেলুন এক অদ্ভুত গল্প –
হাইড্রোজেন একটা ছেলে, যার বান্ধবী হেলিয়াম, ওরা একদিন লিথিয়ামের বাসায় গিয়েছিল…
এইভাবে নামগুলো একটার পর একটা গল্পে ঢুকিয়ে দিন।
নাটকীয় হলে আরও ভালো।
Drama মাথায় অনেকদিন থাকে।

৫. Teach Someone – শেখাতে গিয়ে আপনি নিজেই শিখে ফেলবেন

মজার কথা বলি –
আপনি যখন কাউকে বোঝান, তখন আপনার মাথা দ্বিগুণ শক্তিতে কাজ করে।

কারণ একদিকে তথ্য মনে রাখতে হচ্ছে, আরেকদিকে সেটা ভাষায় প্রকাশ করতে হচ্ছে।
এতে করে আপনার মাথা ভাবে – “আচ্ছা, এখন এটা খুব জরুরি, তাই রেখে দেই।”

আপনার ছোট ভাইকে বোঝান,
বা আপনি নিজেই আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বলুন –
"আজ আমরা শিখব, কীভাবে আয়তক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল বের করতে হয়।"

আয়নাও হেসে উঠবে, আর আপনার পড়াও মাথায় গেঁথে যাবে

৬. Sound Hack – কান দিয়ে ঢুকুক, মুখ দিয়ে বের হোক

অনেকে পড়া মুখে পড়ে না, চোখে দেখে পড়ে।
কিন্তু একটা secret hack হচ্ছে – শোনার অভ্যাস তৈরি করুন।

নিজে নিজে পড়া রেকর্ড করে রাখুন, তারপর ঘুমাতে যাওয়ার সময় বা হাঁটতে হাঁটতে শুনুন।
প্রথম প্রথম হাসি পেতে পারে –
"আহা, আমি নিজের ভয়েস শুনছি!"

কিন্তু কয়েকদিন পরই বুঝবেন –
এই হাসিটাই হয়ে উঠেছে স্মৃতির হালকা সুর।

৭. Chunk It Down – ছোট করে খাও, বড় করে হজম করো

আমরা যখন বিশাল এক টপিক একসাথে মুখস্থ করতে যাই, তখন ব্রেইন বলে –
"ভাইরে, এত বড় একগাদা জিনিস একবারে কেন?"

তাই একে Chunk করে ফেলুন।
পাঁচটা লাইনের পর একটা বিরতি।
তিনটা পয়েন্টের পর একবার চোখ বুজে ভাবুন।

এই ছোট ছোট টুকরোগুলা আপনাকে একটা করে সিঁড়ি দেবে।
সিঁড়ি দিয়ে এক সময় পুরো দালান উঠে যাবেন।

পড়া মনে রাখা কোনো ম্যাজিক না।
এইটা একটা পদ্ধতি।
যদি আপনি মস্তিষ্ককে একটু বুঝিয়ে বলেন, “দোস্ত, এইটা মনে রাখ, জরুরি,” তাহলে মাথাও বলে – “ঠিক আছে।”

কিন্তু জোর করে চাপিয়ে দিলে সে ছুটি নিয়ে চলে যায়।
তাই খেলার মতো করে শিখুন, গল্পের মতো করে মনে রাখুন, আর আনন্দ নিয়ে বুঝে পড়ুন।

তাহলে একদিন বইয়ের পাতাগুলো খুললেই মাথার ভেতর থেকে ভেসে আসবে –
"এইটা আমি জানি। ঠিক এখানে ছিল। মনে আছে।"  পড়ুন, বুঝুন, মনে রাখুন – নিজের মতো করে।


জীবনে কিছু ছোট ছোট তথ্য অনেক বড় রেজাল্ট দেয়।

Youman সেই ছোট তথ্যগুলো আপনাকে সময়মতো জানিয়ে দেয়।


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ভুয়া অফার থেকে নিজেকে বাঁচানোর স্মার্ট উপায় !

সারাক্ষণ ক্লান্ত লাগে কেন? সলিউশন এখানে !