বাসা থেকে কাজের পারফরম্যান্স ম্যাক্সিমাইজ করবেন কিভাবে?

বাইরে ঝুম বৃষ্টি পড়ছে। জানালার কাঁচে পানি জমে টপটপ করে গড়িয়ে পড়ছে।

আপনার ল্যাপটপের স্ক্রিনে বসের ইমেইল – "ডেডলাইন আজ রাত ১১টা!"
এক কাপ গরম কফি হাতে নিয়ে ভাবলেন, "আহা! অফিসে থাকলে এখন নিশ্চয়ই বসের কড়া দৃষ্টি আমার ওপর থাকত!"

বাসা থেকে কাজ করাটা মন্দ না, তাই না?
কিন্তু কয়েকদিন পরই হয়তো বুঝতে পারলেন – আরাম আর প্রোডাক্টিভিটি এক জিনিস নয়!


ওয়ার্ক ফ্রম হোম মানেই যদি হয় – বিছানায় বসে ল্যাপটপ খুলে কাজ করা, পাশে এক প্লেট মুড়ি, আর ইউটিউবে ভিডিও চলতে থাকা, তাহলে দিনশেষে আপনার কাজের গতি একদম শূন্য হয়ে যেতে পারে!

তাই, কিছু কার্যকরী কৌশল বের করতে হলো, যা আপনার সাথে আজ শেয়ার করবো!

১। আলাদা একটি "ওয়ার্ক জোন" তৈরি করুন

আপনার মনকে বোঝাতে হবে – "এই জায়গাটা অফিস! এখানে অলসতা চলবে না!"

✅ বিছানা ছেড়ে নির্দিষ্ট একটি জায়গায় বসুন।
✅ ডেস্ক-চেয়ার না থাকলে, অন্তত টেবিলের সামনে বসে কাজ করুন।
✅ কাজের জায়গাটি গুছিয়ে রাখুন – এলোমেলো পরিবেশে মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন!

আমি প্রথমে ডাইনিং টেবিলের এক কোণায় বসতাম।
কিন্তু মা প্রতিদিন খাবার দিয়ে বলতেন – "এই নেও, পরোটা ঠান্ডা হয়ে যাবে!"
(সেদিনের পর বুঝলাম, ডাইনিং টেবিল আমার জন্য অফিসের চেয়ে বেশি ক্যান্টিন!)

২। "ওয়ার্ক মোড" চালু করার সহজ ট্রিক

বাসায় থাকলে কাজের জন্য মাইন্ডসেট তৈরি করা কঠিন!
তাই, একটি সহজ কৌশল প্রয়োগ করুন – অফিসের মতো পোশাক পরুন!

একবার চেষ্টা করে দেখুন, সত্যিই পার্থক্য বুঝতে পারবেন!
আমি যখন পাজামা পরে কাজ করতাম, ৩০ মিনিট পরেই মনে হতো – "আরে, একটু শুয়ে নিই!"
তারপর?
ঘুম! আর কাজ? একটাও হলো না!

যে দিন থেকে শার্ট পরে কাজে বসেছি, সেদিন থেকে মনে হয় অফিসেই বসে আছি!


৩। "বস" কে ভয় না পেলেও, "টুডু লিস্ট" কে ভয় পেতে হবে!

ওয়ার্ক ফ্রম হোম মানে যদি হয় –
সকাল ১০টায় ল্যাপটপ অন করা, তারপর দুপুরে মনে হওয়া – "আরে, সারাদিন কী করলাম?"
তাহলে বুঝতে হবে, আপনার টাইম ম্যানেজমেন্টে সমস্যা আছে!

এই সমস্যার সহজ সমাধান – টুডু লিস্ট তৈরি করা!

✅ সকালে উঠে কোন কোন কাজ করতে হবে, লিখে ফেলুন।
✅ কাজ শেষ হলে একটি ✔ দিয়ে দিন (এটি কিন্তু ভীষণ সন্তুষ্টি দেয়!)
✅ দুপুরের পর নিজেকে প্রশ্ন করুন – "আজ যা করতে চেয়েছিলাম, তার ৫০%ও করেছি কি?"

আমি প্রথমে ভাবতাম, "এটা তো শুধু 'অফিস বাবুরা' করে!"
কিন্তু যখন দেখলাম, ডেডলাইন ভুলে বস আমার কেস নিয়েছেন, তখন বুঝলাম – 'টুডু লিস্টই জীবন!'

৪। সোশ্যাল মিডিয়া – আপনার সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ!

আপনি কাজ শুরু করতেই মোবাইল যেন চুম্বকের মতো টানতে থাকে, তাই না?

  • "একটু ফেসবুকে ঢুকে দেখি, নতুন কিছু হলো কি না!"
  • "কে কী পোস্ট করল, একটু ইনস্টাগ্রাম চেক করি!"
  • "শুধু একটা ইউটিউব ভিডিও দেখি, তারপর কাজ শুরু করব!"

এই ধরণের বিভ্রান্তি এড়াতে—

  • ফোন সাইলেন্ট করে অন্য রুমে রেখে দিন!
  • সোশ্যাল মিডিয়ার নোটিফিকেশন বন্ধ করুন।
  • কাজের মাঝে টাইমার সেট করুন – ২৫ মিনিট ফুল ফোকাস, তারপর ৫ মিনিট ব্রেক।

এটিকে বলা হয় "পমোডোরো টেকনিক", যা কাজে লাগালে দেখবেন, আপনার কাজের গতি দ্বিগুণ হয়ে গেছে!

৫। "ঘুম" এর সাথে যুদ্ধ করুন, কিন্তু "পাওয়ার ন্যাপ" কে বন্ধু বানান!

ওয়ার্ক ফ্রম হোমের সবচেয়ে বড় শত্রু?
ঘুমের আমন্ত্রণ!

একটু কাজ করলাম, তারপর মনে হলো, "একটু শুয়ে নিই, চোখ ব্যথা করছে!"
এরপর?
চোখ খুললাম এক ঘণ্টা পর! বস তখন কল দিচ্ছেন!

তাই—

  • সকালে ও বিকালে দুই কাপ কফি খেতে পারেন (কিন্তু ওভারডোজ নয়!)
  •   লাইট ব্রেক নিন (তবে সেটা সোশ্যাল মিডিয়া ব্রাউজিং নয়!)
  •   দিনের মাঝামাঝি ২০ মিনিট পাওয়ার ন্যাপ নিন – এটি ব্রেইনকে একদম ফ্রেশ করে দেবে!

 

৬। কাজ শেষ? এবার নিজেকে রিওয়ার্ড দিন!

বস তো আপনাকে প্রতিদিন প্রশংসা করবেন না, তাই নিজেকেই মোটিভেট করতে হবে!

আজকের সব কাজ শেষ?
নিজেকে এক কাপ গরম কফি বা এক প্লেট বিরিয়ানি উপহার দিন!

পুরো সপ্তাহের টার্গেট ঠিকমতো পূরণ করেছেন?
নিজের পছন্দের সিনেমাটি দেখুন!

নিজেকে রিওয়ার্ড দিলে, মস্তিষ্ক আরও বেশি অনুপ্রাণিত হবে এবং পরের বার কাজ আরও ভালোভাবে করতে চাইবে!

ওয়ার্ক ফ্রম হোম, কিন্তু প্রোডাক্টিভিটি যেন থাকে অফিসের মতো!

ওয়ার্ক ফ্রম হোম শুনতে দারুণ মনে হলেও, যদি সঠিকভাবে সময় ও কাজ ম্যানেজ না করেন, তাহলে আপনি শুধু "ওয়ার্কলেস" হয়ে যাবেন!

তাই, একটু প্ল্যানিং করে এগোলে দেখবেন—

  • কাজও হচ্ছে,
  • সময়ও বাঁচছে,
  • আর আপনি অফিসের চেয়ে আরও বেশি এফিশিয়েন্ট হয়ে উঠছেন!

এবার আর দেরি নয়, স্মার্টলি কাজ শুরু করা যাক!

Youman কমিউনিটির অংশ হয়ে জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে উন্নত করুন। আমাদের সাথে থাকলে ক্যারিয়ার, স্বাস্থ্য, ওয়ার্ক-লাইফ ব্যালান্স সহ আরও অনেক কিছুতে পাবেন নতুন দৃষ্টিভঙ্গি! 


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সারাক্ষণ ক্লান্ত লাগে কেন? সলিউশন এখানে !

ভুয়া অফার থেকে নিজেকে বাঁচানোর স্মার্ট উপায় !

যে কৌশলে সহজে পড়া মনে রাখতে পারবেন